ভূতুড়ে বনাম ভুতুড়ে

সাধারণভাবে দেখা যায়, শব্দের মধ্যে ‘ভূত’ শব্দটি থাকলেই উক্ত ‘ভূত’ বানানে ঊ-কার (ূ) ব্যবহৃত হয়। ‘অদ্ভুত’ শব্দটি ব্যতীত আর সকল শব্দের ক্ষেত্রেই এমনটি ঘটে থাকে। যদিও একটি দীর্ঘ সময় ‘ভুতুড়ে’ শব্দটিকেও ‘ব্যতিক্রম’ বলেই মানা হতো, বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান (সংস্করণ: এপ্রিল ২০১৮) বলছে- এ শব্দটির বানান ‘ভূতুড়ে’ হবে।

এসব কারণেই এ দুটো বানান নিয়ে এক ধরনের দ্বিধা তৈরি হয়েছে। এ আলোচনায় আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাবো যে আসলে কোন বানানটি ব্যবহার করা যৌক্তিক হবে, এবং কেন।

বিশ্লেষণ:
‘ভূত’ একটি তৎসম শব্দ। এর সঙ্গে ‘উড়িয়া (> উড়ে)’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘ভূতুড়ে’ শব্দটি গঠিত। ব্যাকরণ বলছে, ‘উড়িয়া (> উড়ে)’ একটি বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়। আর বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ তৎসম হতে পারে না। সুতরাং ‘ভূতুড়ে’ নিঃসন্দেহে একটি বাংলা শব্দ। ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’-ও ‘ভূতুড়ে’-কে বাংলা শব্দ বলেই অভিহিত করেছে।

বাংলা বানানের নিয়ম বলছে, তৎসম শব্দ ব্যতীত অন্য কোনো শব্দেই ঊ-কার (ূ) ব্যবহৃত হবে না। অর্থাৎ ‘ভূতুড়ে’ যেহেতু একটি বাংলা শব্দ, এখানে ঊ-কার (ূ) হতে পারে না। সুতরাং নিয়মানুসারে, ‘ভূতুড়ে’ বানানটি শুদ্ধ হবার পক্ষে জোরালো যৌক্তিক সম্ভাবনা তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।

এক্ষেত্রে ‘ভূতুড়ে’ বানানটির পক্ষে একটি যুক্তি এমন হতে পারে- যেহেতু এ শব্দটির মূল ‘ভূত’ এসেছে সংস্কৃত ‘ভূ’ ধাতু থেকে, তাই এখানে ‘ভূ’ অবিকৃত রাখতে হবে।

সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, বাংলা শব্দ হওয়ায় ‘ভুতুড়ে’ বানানটি ভুল হবার তেমন সুযোগ নেই। আবার, শব্দটির ব্যুৎপত্তি বিবেচনায় ‘ভূতুড়ে’ লেখাও অযৌক্তিক নয়। সুতরাং এ দুটো বানানই শুদ্ধ বানান হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

উল্লেখ্য, ড. মাহবুবুল হক তাঁর রচিত ‘খটকা বানান অভিধান’-এ ‘ভুতুড়ে’ বানানটিকেই ‘মূল বানান’ দেখিয়ে বিকল্প বানান হিসেবে ‘ভূতুড়ে’ শব্দটির উল্লেখ করেছেন।