অলুক দ্বন্দ্ব, অলুক তৎপুরুষ, অলুক বহুব্রীহি

সমাসের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে অলুক সমাস। কেননা মোট তিনটি সমাসের মধ্যে ‘অলুক’ রয়েছে। দুটি কথায় এ সমস্যার সমাধান করে নেওয়া যাক।

আমরা জানি ‘অলুক’ অর্থ: বিভক্তি লোপ পায় না এমন। অর্থাৎ যে-সকল সমাসের সমস্তপদে বিভক্তি লোপ পায় না, বরং যুক্ত থাকে, সেগুলোকে অলুক সমাস বলে।

মনে রাখবেন:
১. সকল পদেই বিভক্তি যুক্ত থাকলে- অলুক দ্বন্দ্ব।
২. কেবল পূর্বপদে বিভক্তি যুক্ত থাকলে: পরপদের অর্থ প্রাধান্য পেলে অলুক তৎপুরুষ, কোনো পদের অর্থই প্রাধান্য না পেলে (নতুন অর্থ দিলে) অলুক বহুব্রীহি।

উদাহরণ ব্যাখ্যা:
ক. দেশে-বিদেশে: অলুক দ্বন্দ্ব।
[ব্যাখ্যা: ‘দেশে’ ও ‘বিদেশে’ দুটো পদের সঙ্গেই বিভক্তি (‘এ’ বিভক্তি) যুক্ত আছে।]

খ. গোরুর গাড়ি: অলুক তৎপুরুষ।
[ব্যাখ্যা: কেবল পূর্বপদে (গোরুর) বিভক্তি (‘র’ বিভক্তি) যুক্ত আছে। এখানে, ‘গোরুর গাড়ি’ বললে আমরা কোনো গোরুকে বুঝি না; বরং গোরুর গাড়ি হচ্ছে একটি গাড়ি।সুতরাং এখানে পরপদের (গাড়ি) অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে।]

গ. মুখে-ভাত: অলুক বহুব্রীহি।
[ব্যাখ্যা: কেবল পূর্বপদে (মুখে) বিভক্তি (‘এ’ বিভক্তি) যুক্ত আছে। এখানে, ‘মুখে-ভাত’ বলতে ‘মুখ’কেও বোঝায় না, আবার ‘ভাত’কেও বোঝায় না; বরং একটি অনুষ্ঠানকে বোঝায়। সুতরাং এখানে কোনো পদের অর্থই প্রাধান্য পাচ্ছে না; নতুন একটি অর্থ (অনুষ্ঠান) দিচ্ছে।]

ব্যাসবাক্য গঠন:
১. অলুক দ্বন্দ্ব: অলুক দ্বন্দ্ব সমাসের ব্যাসবাক্য তৈরি করতে পদগুলোর মাঝে কেবল ও/এবং/আর বসিয়ে দিলেই হয়ে যায়। যেমন: দেশে-বিদেশে = দেশে ও বিদেশে।
২. অলুক তৎপুরুষ: এ সমাসের ব্যাসবাক্য ও সমস্তপদ একই রকম হয়ে থাকে। যেমন: গোরুর গাড়ি = গোরুর গাড়ি।
৩. অলুক বহুব্রীহি: ব্যাসবাক্যের শেষে ‘যার’ বসিয়ে দিলেই অলুক বহুব্রীহি সমাসের ব্যাসবাক্য হয়ে যায়। যেমন: মাথায়পাগড়ি = মাথায় পাগড়ি যার।
তবে কোনো অলুক বহুব্রীহি সমাস দ্বারা যদি অনুষ্ঠান বোঝায়, তাহলে শেষে ‘দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে’ কথাটি বসিয়ে দিতে হবে। যেমন: মুখে-ভাত = মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে।

আরও উদাহরণ:
অলুক দ্বন্দ্ব: দুধে-ভাতে, জলে-স্থলে, হাতে-কলমে, মায়ে-ঝিয়ে, ঘরে-বাইরে।
অলুক তৎপুরুষ: ঘিয়ে ভাজা, কলে ছাঁটা, কলের গান, সোনার তরী, সোনার বাংলা, মনের মানুষ, চোখের বালি, কলুর বলদ, গানের আসর।
অলুক বহুব্রীহি: মাথায়পাগড়ি, গলায়গামছা, হাতে-খড়ি, গায়ে-হলুদ, গায়ে-পড়া, মাথায়-ছাতা, কানে-খাটো, হাতে-ছড়ি, কানে-কলম।