‘স্ত’ ও ‘স্থ’ নিয়ে যন্ত্রণা

‘মুখস্থ’, না-কি ‘মুখস্ত’? ‘ক্ষতিগ্রস্ত’, না-কি ‘ক্ষতিগ্রস্থ’?
এই ‘স্ত’ ও ‘স্থ’ নিয়ে বড্ড ঝামেলা পোহাতে হয় আমাদের। আজ চলুন এ সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তির পথ খোঁজা যাক।

এ দুটি শব্দাংশের ব্যবহার মনে রাখার জন্য শঙ্খ ঘোষ তাঁর ‘শব্দ নিয়ে খেলা’ বইতে দারুণ একটি সূত্র দিয়েছেন: যে শব্দের শেষে ‘স্থ’ হয়, সেখানে ওটা ছেড়ে দিলেও একটা মানে পাওয়া যায়। ‘কণ্ঠস্থ’ থেকে ‘স্থ’ বাদ দিলে থাকে ‘কণ্ঠ’, ‘গৃহস্থ’ থেকে ‘স্থ’ বাদ দিলে থাকে ‘গৃহ’, ‘সুস্থ’ থেকে ‘স্থ’ বাদ দিলে থাকে ‘সু’। কণ্ঠ, গৃহ, সু- প্রত্যেকটি শব্দের আলাদাভাবে অর্থ আছে। কিন্তু আশ্বস্ত, গ্রস্ত, বিন্যস্ত শব্দে শেষের ‘স্ত’ বাদ দিলে কোনও মানে পাওয়া যায় না।

বলার অপেক্ষা রাখে না- খুবই সুন্দর ব্যাখ্যা। কিন্তু যদি এখন ‘বিশ্বস্ত’ ও ‘সমস্ত’ শব্দ দুটির কথা বলি? এখানে তো ‘স্ত’ বাদ দিলে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে (বিশ্ব, সম)। তাহলে ‘বিশ্বস্থ’ ও ‘সমস্থ’ কেন হবে না?

আসলে, শঙ্খ ঘোষ-এর দেওয়া সূত্রটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুফল দেবে, তবে সকল ক্ষেত্রে নয়। তাই ব্যাপারটিকে বরং অন্যভাবে ভাবা যাক। মনে রাখতে হবে- ‘স্থ’ শব্দাংশটি এসেছে ‘স্থা’ ধাতু থেকে, যার অর্থ ‘থাকা’। অর্থাৎ ‘থাকা’ অর্থে সব সময় ‘স্থ’ যুক্ত করতে হবে
যেমন: কণ্ঠে যা থাকে, তা-ই কণ্ঠস্থ। গৃহে যা থাকে, তা-ই গৃহস্থ। সু (ভালো) যে থাকে, সে-ই সুস্থ। একইভাবে, থাকা অর্থে ব্যবহৃত না হলেই ‘স্ত’।

যেমন: বিশ্বস্ত। এখানে ‘স্ত’ বাদ দিলে থাকে বিশ্ব। বিশ্বস্ত বলতে কি বিশ্বে থাকা বোঝায়? না। অর্থাৎ এখানে ‘স্থ’ হবে না; ‘স্ত’-ই সঠিক। সে কারণেই এটি ‘বিশ্বস্ত’ (‘বিশ্বস্থ’ নয়)।

আবার, ‘সমস্ত’ বলতে ‘সম (সমান) থাকা’ বোঝায় না। তাই এখানে ‘স্থ’ হবে না; ‘স্ত’-ই হবে।