সরল, জটিল ও যৌগিক বাক্য চেনার উপায়

আমরা জানি- গঠনগতভাবে বাক্য তিন প্রকার: ১. সরল বাক্য ২. জটিল বা মিশ্র বাক্য ৩. যৌগিক
বাক্য কোনো একটি বাক্য দিয়ে যখন জিজ্ঞেস করা হয় ‘এটি কোন ধরনের বাক্য?’ অনেক ক্ষেত্রেই আমরা এটা নিয়ে সংশয়ে ভুগি। খুব সহজে আজ এ সংশয় দূর করে ফেলবো।চলুন।

বাক্য নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমরা নিচের সূত্রগুলো মনে রাখবো:
১. অব্যয় থাকলেই যৌগিক বাক্য। (অব্যয়: ও, এবং, আর, কিন্তু, নতুবা, তথাপি, তাই, সুতরাং, অথচ, কিংবা, বরং ইত্যাদি)
২. সাপেক্ষ সর্বনাম থাকলেই জটিল বা মিশ্র বাক্য। (সাপেক্ষ সর্বনাম: যে-সে, যেমন-তেমন, যখন-তখন, যদিও-তবুও ইত্যাদি)
৩. একটিমাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকলে সরল বাক্য। (সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া বাক্যের অর্থ প্রকাশ করতে পারে।)
৪. একাধিক সমাপিকা ক্রিয়া থাকলে: ক্রিয়াগুলো পরস্পর নির্ভরশীল হলে জটিল বাক্য; নির্ভরশীল না হলে যৌগিক বাক্য।

যে-কোনো বাক্য নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে ওপরের প্রশ্নগুলো করতে হবে। তাহলেই আমরা সঠিক উত্তরটি পেয়ে যাবো।

উদাহরণ ও ব্যাখ্যা:
ক. বিপদ এবং দুঃখ একসঙ্গে আসে।
প্রশ্ন ১: অব্যয় আছে? আছে (এবং)। সুতরাং এটি যৌগিক বাক্য।

খ. যেহেতু সে পড়েছে, তাই পাশ করেছে।
প্রশ্ন ১: অব্যয় আছে? নেই।
প্রশ্ন ২: সাপেক্ষ সর্বনাম আছে? আছে (যেহেতু-তাই)। সুতরাং এটি জটিল বাক্য।

গ. মেঘ ডাকলে ময়ূর নাচে।
প্রশ্ন ১: অব্যয় আছে? নেই।
প্রশ্ন ২: সাপেক্ষ সর্বনাম আছে? নেই।
প্রশ্ন ৩: কয়টি সমাপিকা ক্রিয়া আছে? ১টি (নাচে)। সুতরাং এটি সরল বাক্য।
[দ্রষ্টব্য: এখানে ‘ডাকলে’ও একটি ক্রিয়া। কিন্তু যদি বলা হয় ‘মেঘ ডাকলে’, তাহলে বাক্যের অর্থ পূর্ণ হয় না। তাই ‘ডাকলে’ অসমাপিকা ক্রিয়া। কিন্তু ‘ময়ূর নাচে’ বললে বাক্যের অর্থ পূর্ণ হয়। তাই ‘নাচে’ সমাপিকা ক্রিয়া।]

ঘ. সত্য বলিনি, বিপদে পড়েছি।
প্রশ্ন ১: অব্যয় আছে? নেই।
প্রশ্ন ২: সাপেক্ষ সর্বনাম আছে? নেই।
প্রশ্ন ৩: কয়টি সমাপিকা ক্রিয়া আছে? ২টি (বলিনি, পড়েছি)।
প্রশ্ন ৪: ক্রিয়াগুলো কি পরস্পর নির্ভরশীল? হ্যাঁ। সুতরাং এটি জটিল বা মিশ্র বাক্য।
[দ্রষ্টব্য: সত্য না বলার কারণেই বিপদে পড়েছে। সুতরাং দুটো কাজ একে অপরের ওপর নির্ভর করেই ঘটেছে।]

ঙ. পড়েছে, ফেল করেছে।
প্রশ্ন ১: অব্যয় আছে? নেই।
প্রশ্ন ২: সাপেক্ষ সর্বনাম আছে? নেই।
প্রশ্ন ৩: কয়টি সমাপিকা ক্রিয়া আছে? ২টি (পড়েছে, করেছে)।
প্রশ্ন ৪: ক্রিয়াগুলো কি পরস্পর নির্ভরশীল? না। সুতরাং এটি যৌগিক বাক্য।
[দ্রষ্টব্য: ‘ফেল করেছে’টা ‘পড়েছে’র ওপর নির্ভর করেনি। পড়েছে বলেই ফেল করেছে এমন নয়। কিন্তু যদি বলা হতো ‘পড়েনি, ফেল করেছে।’ তাহলে নিশ্চয় নির্ভরশীল হতো।]