বানান: গোরু

‘গরু’ কীভাবে ‘গোরু’ হয়ে গেল? বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক-সংশয়-সংকোচ খুবই স্বাভাবিক। কেননা ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের আগেও বাংলা একাডেমির অভিধানে ‘গরু’ লেখা হয়েছে। তাহলে হঠাৎ ‘গোরু’ কেন?


বোঝার জন্য শব্দটির ইতিহাস দেখা যাক:

১. মধ্যযুগের কাব্যে এ শব্দটির ছয় রকম বানান পাওয়া যায়: গরু, গরুঅ, গরূ, গোরু, গোরো, গো।

২. বাংলা ভাষার প্রথম ‘মহাকবি’ বড়ু চণ্ডীদাস লিখেছেন: গরু, গরূ, গোরো।

৩. বৈষ্ণব পদাবলির আদি কবি বিদ্যাপতি লিখেছেন: ‘গরুঅ’।

৪. ভাগবতের রচয়িতা মালাধর বসু লিখেছেন: ‘গোরু’।

৫. চারণ-কবি মুকুন্দ দাস লিখেছেন ‘গোরু’।

৬. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখতেন: ‘গোরু’।

৭. কাজী নজরুল ইসলামের লেখাতেও ‘গোরু’ পাওয়া যায়।

৮. ১৯২৯/৩০ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখাতেও পাওয়া যায় ‘গোরু’ বানানটি।

কিন্তু রবীন্দ্রনাথ পরে ‘গরু’ লিখতে শুরু করলে পশ্চিমবঙ্গে ‘গরু’ বানানটি বহুল প্রচলিত হয়ে যায়। বাংলা শব্দের উচ্চারণরীতি বিবেচনায় ‘গরু’ লিখলেও উচ্চারণে কোনো সমস্যা অবশ্য থাকে না।

গাঠনিক ইতিহাস: ‘গোরু’ শব্দটি এসেছে মূলত সংস্কৃত ‘গোরূপ’ শব্দটি থেকে।

দ্রষ্টব্য: পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত অভিধানগুলোতে বহু বছর আগে থেকেই ‘গোরু’ বানানটি ব্যবহৃত ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সংসদ বাংলা অভিধান (সংস্করণ: ২০০০)-তেও ‘গোরু’ বানানটি ব্যবহৃত হয়েছে। সর্বশেষ, জামিল চৌধুরী সম্পাদিত ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ (সংস্করণ: ২০১৬)-তেও শব্দটি ‘গোরু’ বানানে লেখা হয়।

সুতরাং, ব্যাবহারিক, গাঠনিক ও আভিধানিক ইতিহাস অনুযায়ী ‘গোরু’ বানানটিই সিদ্ধ, ‘গরু’ পরিহার্য।