নঞ্ তৎপুরুষ, নঞ্ বহুব্রীহি

নঞ্ সমাস নিয়ে কমবেশি সবাইকেই সমস্যায় পড়তে হয়। কেননা দুটি সমাসের মধ্যে ‘নঞ্’ রয়েছে। একটি হচ্ছে নঞ্ তৎপুরুষ, অপরটি নঞ্ বহুব্রীহি। সহজে এ সমস্যার সমাধান করে নেওয়া যাক।
আমরা জানি- ‘নঞ্’ একটি না-বাচক শব্দ। এর দ্বারা ‘না’ বোঝানো হয়। অর্থাৎ যে-সকল সমাসের সমস্তপদ দ্বারা না-বাচক কিছু বোঝানো হয়, সেগুলোকে নঞ্ সমাস বলে।

মনে রাখবেন:
১. পরপদের অর্থ প্রাধান্য পেলে নঞ্ তৎপুরুষ সমাস হবে।
২. কোনো পদের অর্থই প্রাধান্য না পেলে (অন্য অর্থ দিলে) নঞ্ বহুব্রীহি সমাস হবে।

উদাহরণ ব্যাখ্যা:
ক. অবিশ্বাস: নঞ্ তৎপুরুষ।
[ব্যাখ্যা: ‘অবিশ্বাস’ অর্থ কী? এর অর্থ- বিশ্বাস নেই। কী নেই? বিশ্বাস। তাহলে দেখা যাচ্ছে- এখানে পরপদ ‘বিশ্বাস’-এর অর্থ প্রাধান্য পাচ্ছে।]
খ. অজ্ঞান: নঞ্ বহুব্রীহি।
[ব্যাখ্যা: ‘অজ্ঞান’ অর্থ কী? ‘অজ্ঞান’ অর্থ- যার জ্ঞান নেই। অর্থাৎ ‘অজ্ঞান’ দ্বারা জ্ঞানকে বোঝাচ্ছে না, সেই ব্যক্তিকে বোঝাচ্ছে যার জ্ঞান নেই। সুতরাং এখানে অন্য একটি অর্থ (জ্ঞানহীন ব্যক্তি) দিচ্ছে।]

ব্যাসবাক্য গঠন:
১. নঞ্ তৎপুরুষ: নঞ্ তৎপুরুষ সমাসের ব্যাসবাক্য তৈরি করতে সমস্তপদের না-বাচক শব্দাংশের স্থানে ন/না/নি/নাই/নেই/নয় বসিয়ে দিলেই হয়ে যায়। যেমন: অবিশ্বাস = ন বিশ্বাস। এখানে, না-বাচক শব্দাংশ ‘অ’-এর স্থানে ‘ন’ বসানো হয়েছে।
২. নঞ্ বহুব্রীহি: ব্যাসবাক্যের শুরুতে ন/না/নি/নাই/নেই/নয় এবং শেষে যা/যার/যাতে
বসিয়ে দিলেই নঞ্ বহুব্রীহি সমাসের ব্যাসবাক্য হয়ে যায়। যেমন: অজ্ঞান = নেই জ্ঞান যার। এখানে, শুরুতে ‘নেই’ এবং শেষে ‘যার’ বসানো হয়েছে।

আরও উদাহরণ:
নঞ্ তৎপুরুষ: অনাচার, অকাতর, অনাদর, নাতিদীর্ঘ, নাতিখর্ব, অভাব, বেতাল, অকাল, আধোয়া, নামঞ্জুর, অকেজো, অজানা, অচেনা, আলুনি, নাছোড়, অনাবাদি, নাবালক,অলৌকিক, অসুর, অঘাট, অক্ষত, বেআইনি, অপর্যাপ্ত, অনতিবৃহৎ, অমিল, অনভিজ্ঞ,অনতিদূর, অসময়, অনুর্বর, নাতিশীতোষ্ণ, অসহযোগ, অনশন, অনুন্নত, অসুখ, আগাছা, বেসরকারি, অভাঙা, অনাসৃষ্টি, অনুচিত, নিখুঁত, অনেক, গরমিল, গরহাজির।

নঞ্ বহুব্রীহি: বেহেড, নাচার, নির্ভুল, নাজানা, অজানা, নাহক, নিরুপায়, নির্ঝঞ্ঝাট, অবুঝ, অকেজো, বেপরোয়া, বেহুঁশ, অনন্ত, বেতার, নিঃশঙ্ক, নিষ্কলঙ্ক, বিপত্নীক, বেকার।

দ্রষ্টব্য: কয়েকটি পদ এমন রয়েছে যেগুলো নঞ্ তৎপুরুষ ও নঞ্ বহুব্রীহি উভয় সমাস হিসাবেই গ্রহণযোগ্য। যেমন: অজানা, অচেনা, অকেজো।