দ্বিতীয়া তৎপুরুষ বনাম চতুর্থী তৎপুরুষ

আমরা জানি- সমস্তপদকে ভাঙলে পূর্বপদের সঙ্গে যে বিভক্তি পাওয়া যায়, সেই বিভক্তি অনুযায়ীই সেই তৎপুরুষ সমাসের নাম হয়।

দ্বিতীয়া ও চতুর্থী তৎপুরুষ সমাসের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, এ দুটো বিভক্তির চেহারা একই রকম (কে, রে)। তাহলে কীভাবে আমরা এদের পৃথক করবো? চলুন শিখি।

কে/রে পাওয়া গেলে:
১. সম্প্রদান (স্বত্ব ত্যাগ বা নিঃস্বার্থে কিছু দেওয়া) না হলে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হবে।
যেমন: দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত। এখানে ‘দুঃখপ্রাপ্ত’ শব্দটি দ্বারা নিঃস্বার্থভাবে কোনও কিছু দেওয়া বোঝাচ্ছে না। অর্থাৎ এখানে সম্প্রদান হচ্ছে না। সুতরাং এটি দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হবে।

২. সম্প্রদান হলে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস হবে।
যেমন: গুরুকে ভক্তি = গুরুভক্তি। এ ক্ষেত্রে, গুরুকে নিঃস্বার্থভাবেই ভক্তি করা হয়। অর্থাৎ এখানে সম্প্রদান হচ্ছে। সুতরাং এটি চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস।

আরও দুটি সূত্র:
১. ব্যাপ্তি (বিস্তৃতি) বোঝালে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়।
যেমন: চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী। সুখের ব্যাপ্তিকাল কত? চিরকাল। অর্থাৎ এখানে ‘ব্যাপ্তি’ বোঝাচ্ছে।

২. জন্য বা নিমিত্ত (কারণ) বোঝালে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস হয়।
যেমন: হজের জন্য যাত্রা = হজযাত্রা। কীসের জন্য যাত্রা? হজের জন্য। অর্থাৎ এখানে ‘জন্য’ বোঝাচ্ছে।

উদাহরণ:
দ্বিতীয়া তৎপুরুষের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ:
বিপদাপন্ন = বিপদকে আপন্ন
রথদেখা = রথকে দেখা
বিস্ময়াপন্ন = বিস্ময়কে আপন্ন
দেশভঙ্গ = দেশকে ভঙ্গ
জলসেচন = জলকে সেচন
জীবনানন্দ = জীবন ব্যাপিয়া আনন্দ
দীর্ঘস্থায়ী = দীর্ঘকাল ব্যাপিয়া স্থায়ী

আরও উদাহরণ: পরলোকগত, গা-ঢাকা, বীজবোনা, ভাতরাঁধা, ছেলে-ভুলানো, নভেল-পড়া, শরনিক্ষেপ, বেগসংবরণ, পুত্রলাভ, তপোবনদর্শন, পৃষ্ঠপ্রদর্শন, আম-কুড়ানো, দুঃখাতীত, শরণাগত, বয়ঃপ্রাপ্ত, সংখ্যাতীত, চরণাশ্রিত, স্বর্গপ্রাপ্ত, ভারপ্রাপ্ত, সাহায্যপ্রাপ্ত, কলাবেচা, হ্রদদেখা, শোকাতীত, চিরসুন্দর, চিরশত্রু, নিত্যধারা, ক্ষণস্থায়ী, চিরবঞ্চিত।

দুটি বিশেষ উদাহরণ: অর্ধমৃত = অর্ধ রূপে মৃত, দ্রুতগামী = দ্রুত যথা তথা গামী।

চতুর্থী তৎপুরুষের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ:
দেবদত্ত = দেবকে দত্ত
বসতবাড়ি = বসতের নিমিত্ত বাড়ি
ছাত্রাবাস = ছাত্রদের জন্য আবাস
ডাকমাশুল = ডাকের নিমিত্ত মাশুল
রান্নাঘর = রান্নার জন্য ঘর
বালিকা-বিদ্যালয় = বালিকাদের জন্য বিদ্যালয়
তপোবন = তপের নিমিত্ত বন

আরও উদাহরণ: আরামকেদারা, বিয়েপাগলা, চোষকাগজ, শিশুমঙ্গল, মুসাফিরখানা, মালগুদাম, মাপকাঠি, মেয়েস্কুল, পাগলাগারদ, শিশুবিভাগ, মরাকান্না, সেচনকলস, মাথারকাঁটা, পাঠশালা।