তৎপুরুষ সমাসের প্রকারভেদ

তৎপুরুষ সমাস নয় প্রকার।
সেগুলো হলো- দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, ন্‌ঞ্, উপপদ ও অলুক তৎপুরুষ সমাস।

দ্বিতীয়া থেকে সপ্তমী:
সমস্তপদকে ভাঙলে পূর্বপদের সঙ্গে যে বিভক্তি পাওয়া যাবে, সেই বিভক্তি অনুযায়ীই সেই তৎপুরুষ সমাসের নাম হবে।

উদাহরণ ও ব্যাখ্যা:
১. গাছপাকা। ‘গাছপাকা’ অর্থ কী? এর অর্থ- গাছে পাকা। তাহলে দেখা যাচ্ছে- সমস্তপদকে ভাঙার পর পূর্বপদ ‘গাছ’-এর সঙ্গে ‘এ’ বিভক্তি (গাছে = গাছ + এ) যুক্ত হয়েছে। ‘এ’ হচ্ছে সপ্তমী বিভক্তি। সুতরাং ‘গাছপাকা’ সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস।
সপ্তমী তৎপুরুষের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ:
দিবানিদ্রা = দিবায় নিদ্রা
রথারোহণ = রথে আরোহণ
জলমগ্ন = জলে মগ্ন
রাতকানা = রাতে কানা
অকালপক্ব = অকালে পক্ব
আরও উদাহরণ: কোটরস্থিত, দানবীর, পুথিগত, শ্রুতপূর্ব, সংখ্যালঘিষ্ঠ, তালকানা, সত্যাগ্রহ, অশ্রুতপূর্ব, অদৃষ্টপূর্ব, মাথাব্যথা, কর্মনিপুণ, বাকপটু, গোলাভরা, অকালমৃত্যু, বিশ্ববিখ্যাত, ভোজনপটু, বাক্সবন্দি, বস্তাপচা, মনমরা।

২. চাবাগান। এর অর্থ- চায়ের বাগান। তাহলে দেখা যাচ্ছে- সমস্তপদকে ভাঙার পর পূর্বপদ ‘চা’-এর সঙ্গে ‘এর’ বিভক্তি (চায়ের = চা + এর) যুক্ত হয়েছে। ‘এর’ হচ্ছে ষষ্ঠী বিভক্তি। সুতরাং ‘চাবাগান’ ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস।
ষষ্ঠী তৎপুরুষের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ:
রাজপুত্র = রাজার পুত্র
খেয়াঘাট = খেয়ার ঘাট
দেশসেবা = দেশের সেবা
দিল্লীশ্বর = দিল্লীর ঈশ্বর
পূর্বাহ্ন = অহ্নের পূর্বভাগ
ছাগদুগ্ধ = ছাগীর দুগ্ধ (‘ছাগের দুগ্ধ’ নয়)
গণতন্ত্র = গণের তন্ত্র
রাজপথ = পথের রাজা
ভারার্পণ = ভারের অর্পণ
পুষ্পসৌরভ = পুষ্পের সৌরভ
আরও উদাহরণ: ছাত্রসমাজ, বাঁদরনাচ, পাটক্ষেত, ছবিঘর, ঘোড়দৌড়, শ্বশুরবাড়ি, বিড়ালছানা, বৃহস্পতি, কবিগুরু, যুদ্ধোত্তর, বনস্পতি, ক্রোড়পত্র, কার্যালয়, বনমধ্যে,তৎপ্রতি, জনকণ্ঠ, রাজকন্যা, অতিথিসৎকার, কর্ণকুহর, তপস্বীকন্যা, দূতাবাস, মাঝনদী, মালগুদাম, প্রাণবধ, বজ্রসম, কার্যক্ষতি, ভুজবন, উপলখণ্ড, জীবনসঞ্চার, সন্ধ্যাপ্রদীপ, সুখসময়, গৃহকর্ত্রী, মাতৃসেবা, নাট্যাভিনয়, হাতঘড়ি, প্রাগৈতিহাসিক, মনোযোগ, পৌরসভা, প্রজাতন্ত্র, কলাভবন, বিশ্বভারতী।

৩. স্কুলপালানো। ‘স্কুলপালানো’ অর্থ কী? এর অর্থ- স্কুল থেকে পালানো। তাহলে দেখা যাচ্ছে- সমস্তপদকে ভাঙার পর পূর্বপদ ‘স্কুল’-এর সঙ্গে ‘থেকে’ বিভক্তি (স্কুল থেকে) যুক্ত হয়েছে। ‘থেকে’ হচ্ছে পঞ্চমী বিভক্তি। সুতরাং ‘স্কুলপালানো’ পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস।
পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাসের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ:
বিলাতফেরত = বিলাত থেকে ফেরত
জেলমুক্ত = জেল থেকে মুক্ত
বোঁটাখসা = বোঁটা থেকে খসা
প্রাণপ্রিয় = প্রাণের চেয়ে প্রিয়
দেশপলাতক = দেশ থেকে পলাতক
স্নাতকোত্তর = স্নাতক থেকে উত্তর
আরও উদাহরণ: খাঁচাছাড়া, জেলখালাস, আগাগোড়া, শাপমুক্ত, ঋণমুক্ত, মুখভ্রষ্ট, জন্মান্ধ,
সত্যভ্রষ্ট, লোকভয়, পদচ্যুত, বন্ধনমুক্ত, স্বর্গভ্রষ্ট, রোগমুক্ত, দলছুট, সর্বশ্রেষ্ঠ, ধর্মভ্রষ্ট।

৪. মনগড়া। এর অর্থ- মন দিয়ে গড়া। তাহলে দেখা যাচ্ছে- সমস্তপদকে ভাঙার পর পূর্বপদ ‘মন’-এর সঙ্গে ‘দিয়ে’ বিভক্তি (মন দিয়ে) যুক্ত হয়েছে। ‘দিয়ে’ হচ্ছে তৃতীয়া বিভক্তি। সুতরাং ‘মনগড়া’ তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস।
মনে রাখতে হবে: সমস্তপদে উন/হীন/শূন্য থাকলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়।
তৃতীয়া তৎপুরুষের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ:
শ্রমলব্ধ = শ্রম দ্বারা লব্ধ
মধুমাখা = মধু দ্বারা মাখা
ধনাঢ্য = ধন দ্বারা আঢ্য
ন্যায়সঙ্গত = ন্যায় দ্বারা সঙ্গত
বাকবিতণ্ডা = বাক দ্বারা বিতণ্ডা
বাগদত্তা = বাক দ্বারা দত্তা
অস্ত্রোপচার = অস্ত্র দ্বারা উপচার
আরও উদাহরণ: একোন, বিদ্যাহীন, জ্ঞানশূন্য, পাঁচ-কম, স্বর্ণমণ্ডিত, হীরকখচিত, চন্দনচর্চিত, সমবেদনাভরা, স্বভাবসিদ্ধ, মাতৃহীন, কণ্টকাকীর্ণ, ছায়াশীতল, রবাহূত, বজ্রাহত, পদদলিত, ঢেঁকিছাঁটা, রক্তাক্ত।

আমরা জানি- দ্বিতীয়া ও চতুর্থী বিভক্তি দেখতে একই রকম। ‘কে’ ও ‘রে’- এ দুটো বিভক্তি দ্বিতীয়া ও চতুর্থী উভয় বিভক্তির মধ্যেই পড়ে। তাই এ বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। দ্বিতীয়া ও চতুর্থী বিভক্তি সম্পর্কে আলোচনা এখানে

দ্রষ্টব্য:
নঞ্ তৎপুরুষ সমাসের আলোচনা এখানে
উপপদ তৎপুরুষ সমাস চিনতে চলে আসুন এখানে
অলুক তৎপুরুষ সমাসের আলোচনা এখানে