গোরু খাঁটি, না-কি দুধ খাঁটি?

‘খাঁটি গোরুর দুধ’, না-কি ‘গোরুর খাঁটি দুধ’- এটি সম্ভবত বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় বিতর্কগুলোর একটি।

একদল মানুষ আছেন, যারা ‘খাঁটি গোরুর দুধ’-এর বিপক্ষে দারুণ একটি যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। তাদের বক্তব্য হলো- গোরু খাঁটি, না-কি দুধ খাঁটি? যেহেতু গোরুর খাঁটি হওয়ার কোনো ব্যাপার নেই, খাঁটি হয় দুধ; সুতরাং এটি হবে ‘গোরুর খাঁটি দুধ’।
আচ্ছা, তাদের কথা যদি মেনেও নিই, তাহলে আমার মনেও তো প্রশ্ন জাগে- গোরু তাহলে ভেজাল দুধও দেয় না-কি?
না, গোরু কখনোই ভেজাল দুধ দেয় না। সুতরাং এ যুক্তিতে ‘গোরুর খাঁটি দুধ’ও বাতিল
হয়ে যায়।

কিন্তু, এ প্রশ্ন দুটোর কোনোটিই যুক্তিযুক্ত নয়; এগুলো হলো ‘প্রতারক যুক্তি’, যেটাকে ইংরেজিতে বলে ‘Logical fallacy’।

প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটি এ-রকম:
১. কী খাঁটি? গোরুর দুধ। অর্থাৎ ‘খাঁটি গোরুর দুধ’ সঠিক।
২. কীসের খাঁটি দুধ? গোরুর। অর্থাৎ ‘গোরুর খাঁটি দুধ’- এটাও সঠিক।

এবারে চলুন, এর ব্যাকরণিক ব্যাখ্যাটা জেনে নেওয়া যাক।
আমরা জানি- সমাসের নিয়মে গঠিত পদকে সমস্তপদ বলে।
মনে রাখতে হবে: বিশেষণ কখনও সমস্তপদের মধ্যখানে বসে না। বিশেষণ বসে সমস্তপদের পূর্বে।

উদাহরণ ব্যাখ্যা:
১. খাঁটি গোরুর দুধ। এখানে, ‘গোরুর দুধ’-কে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- এটি অলুক তৎপুরুষ সমাসের সমস্তপদ। যেহেতু ‘গোরুর দুধ’ একটি সমস্তপদ; তাই ‘খাঁটি’ শব্দটি এর মধ্যখানে বসানো যাচ্ছে না, বসাতে হবে এর পূর্বে। সুতরাং ‘খাঁটি গোরুর দুধ’ সঠিক।

২. গোরুর খাঁটি দুধ। এখানে, ‘খাঁটি দুধ’-কে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- এটি সাধারণ কর্মধারয় সমাসের সমস্তপদ। যেহেতু ‘খাঁটি দুধ’ একটি সমস্তপদ; তাই ‘গোরুর’ শব্দটি এর মধ্যখানে বসানো যাচ্ছে না, বসাতে হবে এর পূর্বে। সুতরাং ‘গোরুর খাঁটি দুধ’ সঠিক।

তাহলে সব মিলিয়ে কী দাঁড়ালো? দাঁড়ালো এই যে, ‘খাঁটি গোরুর দুধ’ বলুন বা ‘গোরুর খাঁটি দুধ’ বলুন- কোনোটিই ভুল নয়।

আরও একটি উদাহরণ:
একই ধরনের আরও একটি জনপ্রিয় প্রশ্ন হচ্ছে, ‘বিরাট গোরু-ছাগলের হাট’ সঠিক, না-কি ‘গোরু-ছাগলের বিরাট হাট’ সঠিক?
এ-ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি একই রকম। অর্থাৎ ওপরের দুটি বাক্যই সঠিক।