গরু যদি ‘গোরু’ হয়, তরু কেন ‘তোরু’ নয়?

আমরা ইতোমধ্যেই ‘গোরু’ বানানটির ব্যাপারে জেনেছি। অনেকেরই ধারণা, কেবল উচ্চারণের ওপর ভিত্তি করেই বানানটি ‘গরু’ থেকে ‘গোরু’-তে রূপান্তরিত হয়েছে। যদিও এ ধারণা সঠিক নয়, তথাপি কিছু প্রশ্ন চলে আসে এ-রকম: তরু কেন ‘তোরু’ হবে না? মরু কেন ‘মোরু’ হবে না? সরু কেন ‘সোরু’ হবে না? চলুন, এর কারণটা জেনে নেওয়া যাক।

শব্দগুলোর বিশ্লেষণ:
১. গোরু: ‘গোরু’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘গোরূপ’ থেকে। এখানে দেখা যাচ্ছে, শব্দটিতে ব্যুৎপত্তিগতভাবেই ‘গ’-এর সঙ্গে ও-কার যুক্ত ছিল। (‘গোরু’ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আলোচনা এখানে)

২. তরু: এ শব্দটির বিশ্লেষণ হলো, √তৃ + উ = তরু। প্রকৃতি-প্রত্যয়ের নিয়মানুসারে, প্রকৃতির সঙ্গে ঋ-কার যুক্ত থাকলে শব্দ গঠনের সময় উক্ত ঋ-কার স্থানে ‘অর্’ হয়। এখানে প্রকৃতি ‘তৃ’-তে একটি ঋ-কার আছে; তাই এই ঋ-কার স্থানে ‘অর্’ বসাতে হবে।
অর্থাৎ এখানে, ত + অর্ (ঋ) + উ = তরু।

৩. মরু: এ শব্দটির বিশ্লেষণ হলো, √মৃ + উ = মরু। এখানে ওপরের একই নিয়মে ‘ম + অর্ (ঋ) + উ = মরু’ হয়েছে।

৪. সরু: এটি একটি দেশি শব্দ। এ শব্দটি জন্ম থেকেই এ-রকম।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, প্রত্যেকটি শব্দের গঠন ও বিবর্তনের ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাস ও ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। তাই ‘এটি হলে ওটি কেন নয়’ জাতীয় প্রশ্ন সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কেননা শব্দের বানান সব সময় তার উচ্চারণের ভিত্তিতে হয় না, বানান গৃহীত হয় শব্দটির ব্যুৎপত্তি ও বিবর্তন অনুসারে।