কর্ম কারক বনাম সম্প্রদান কারক

দুটো প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা যাক।
১. ‘ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।’ এ বাক্যে ‘ভিক্ষা’ কোন কারক?
২. ‘ধোপাকে কাপড় দান করো।’ এ বাক্যে ‘ধোপাকে’ কোন কারক?
আমি সম্ভবত আপনার উত্তরটা জানি। আপনি প্রথম প্রশ্নের উত্তর করেছেন ‘সম্প্রদান কারক’ এবং দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর করেছেন ‘কর্ম কারক’।
আপনার উত্তর যদি এমনটাই হয়ে থাকে। তাহলে আপনি দুটো প্রশ্নেরই ভুল উত্তর করেছেন।

এ ধরনের উদাহরণগুলোর ক্ষেত্রে, আমরা সবাই জানি- স্বত্ব ত্যাগ করে (নিঃস্বার্থভাবে) কোনো কিছু দান করলে সম্প্রদান কারক হয়।
এখানে কোনও ভুল নেই। তবে, আরেকটু যোগ করার প্রয়োজন আছে। কেবল ‘স্বত্ব ত্যাগ’ দিয়েই সম্প্রদান কারক চেনা যায় না। কেননা এসব ক্ষেত্রে কর্ম কারক ও সম্প্রদান কারকের মধ্যে একটু ঝামেলা আছে। একটু ব্যাখ্যা করে বোঝা যাক বিষয়টা।

সূত্রটি হচ্ছে:
ক. কর্ম কারক: কী/কাকে?
খ. সম্প্রদান কারক: স্বত্ব ত্যাগ + কাকে?
এর মানে হচ্ছে, ক্রিয়াকে কী/কাকে দ্বারা প্রশ্ন করলে যেটা পাওয়া যাবে, সেটাই কর্ম কারক। কিন্তু সম্প্রদান কারকের বেলায় কেবল স্বত্ব ত্যাগ হলেই হবে না, ‘কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করতে হবে।

উদাহরণ ব্যাখ্যা:
১. ‘ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।’
এ বাক্যে স্বত্ব ত্যাগ করেই ভিক্ষা দেয়া হবে; সুতরাং এখানে একটি সম্প্রদান কারক অবশ্যই আছে। তবে নিশ্চয় ‘ভিক্ষুককে’ ও ‘ভিক্ষা’ দুটোই সম্প্রদান কারক নয়। কেননা সম্প্রদান কারক নির্ণয়ের আরেকটি শর্ত আছে। সেটা কী? সূত্রের দিকে তাকিয়ে দেখুন- ‘কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করতে হবে। এখন যদি প্রশ্ন করি- ‘কাকে দাও?’ উত্তর আসবে- ‘ভিক্ষুককে’। সুতরাং এ বাক্যে সম্প্রদান কারকটি হচ্ছে ‘ভিক্ষুককে’।
তাহলে ‘ভিক্ষা’ কোন কারক? এখানে কী ধরনের প্রশ্ন করলে ‘ভিক্ষা’কে পাওয়া যাবে? দেখুন- ‘কী দাও?’ ভিক্ষা। তার মানে, ‘কী’ দিয়ে প্রশ্ন করতে হচ্ছে। সূত্রের দিকে তাকিয়ে দেখুন। ‘কী’ দিয়ে প্রশ্ন করলে কর্ম কারক পাওয়া যায়। অর্থাৎ এ বাক্যে ‘ভিক্ষা’ একটি কর্ম কারক।

২. ‘ধোপাকে কাপড় দান করো।’
উদাহরণটি ভালোভাবে লক্ষ করুন। আপনি চিরদিন পড়ে এসেছেন ‘ধোপাকে কাপড় দাও’; কিন্তু আমি উদাহরণ দিয়েছি ‘ধোপাকে কাপড় দান করো।’ ‘কাপড় দাও’ বলতে কাপড় ধুতে দেয়া বোঝাচ্ছে; কিন্তু যখনই বলছি ‘কাপড় দান করো’, তখন কি আর ধুতে দেয়া বোঝাচ্ছে? না, তখন ‘দান করা’ বোঝাচ্ছে। সুতরাং এ বাক্যটিতেও একটি সম্প্রদান কারক আছে, কেননা এখানেও স্বত্ব ত্যাগ (দান) হয়েছে। এখন তাহলে সম্প্রদান কারক চিনতে হলে কী দিয়ে প্রশ্ন করবো? ‘কাকে’ দিয়ে। কাকে দান করো? ধোপাকে। সুতরাং ‘ধোপাকে’ এখানে সম্প্রদান কারক।
কিন্তু যদি ‘ধোপাকে কাপড় দাও’ থাকতো, তাহলে এটি কোনোভাবেই সম্প্রদান কারক হতো না। কেননা এ ক্ষেত্রে কাপড় ‘ধুতে দেয়া’ বোঝাচ্ছে।
এখন যদি জিজ্ঞেস করা হয়- ওপরের বাক্যটিতে ‘কাপড়’ কোন কারক?
প্রশ্ন করি- কী দাও? কাপড়। ‘কী’ দিয়ে প্রশ্ন করলে কোন কারক পাওয়া যায়? কর্ম
কারক। সুতরাং এখানে ‘কাপড়’ কর্ম কারক।

তাহলে সব মিলিয়ে কী দাঁড়ালো? সহজ কথায়- যাকে দান করা হয়, সে সম্প্রদান। যা দান করা হয়, তা কর্ম।

এবার দেখা যাক:
১, ‘অসহায়কে ত্রাণ দাও।’
আগে দেখে নিই এখানে নিঃস্বার্থভাবে কিছু দেয়া (দান) হলো কি না? নিশ্চয়। অসহায়কে নিঃস্বার্থভাবেই ত্রাণ দেয়া হয়। তার মানে, এখানে একটি সম্প্রদান কারক আছে।
তাহলে ওপরের ‘সহজ কথায়’ অনুযায়ী- কাকে দান করা হচ্ছে? অসহায়কে (সম্প্রদান কারক)। কী দান করা হচ্ছে? ত্রাণ (কর্ম কারক)।

২. ‘বাবা আমাকে কলম কিনে দিলেন।’
এখানে কি কোনো ‘দান’ হয়েছে? না। সুতরাং এখানে কোনো সম্প্রদান কারক নেই। তবে কর্ম কারক নিশ্চয় আছে।
উল্লিখিত সূত্র অনুয়ায়ী- কর্ম পাওয়া যায় ‘কী/কাকে’ দ্বারা প্রশ্ন করলে।
প্রশ্ন করি- কী কিনে দিলেন? কলম। কাকে কিনে দিলেন? আমাকে।
সুতরাং এ বাক্যে ‘কলম’ ও ‘আমাকে’ কর্ম কারক।