কর্মধারয় সমাস

সংজ্ঞা: যেখানে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।

উদাহরণ ব্যাখ্যা:
মহানবি। এখানে পূর্বপদ (মহান > মহা) একটি বিশেষণ পদ (যেহেতু এটি নবির গুণ বোঝাচ্ছে) এবং ‘নবি’ বিশেষ্য পদ। অর্থাৎ এখানে বিশেষণ ও বিশেষ্য পদ মিলে সমাসটি গঠিত হয়েছে।
এখন, ‘মহানবি’ শব্দটি দ্বারা কী বোঝাচ্ছে? যে-কোনো মহান ব্যক্তিকেই বোঝাচ্ছে, না-কি একজন নবিকে বোঝাচ্ছে? উত্তর হচ্ছে: নিশ্চয় একজন নবিকে বোঝাচ্ছে। তার মানে, এখানে ‘নবি’ (পরপদ) অর্থটি প্রাধান্য পাচ্ছে।
যেহেতু বিশেষণ ও বিশেষ্য পদ মিলে গঠিত হয়েছে এবং এখানে পরপদের অর্থই প্রাধান্য পাচ্ছে, তাই এটি একটি কর্মধারয় সমাস। পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় বলে একে ‘পরপদ প্রধান’ সমাস বলা হয়।

চেনার উপায় ও ব্যাসবাক্য গঠন:
১. ‘মহা’ থাকলে: বস্তুর ক্ষেত্রে ‘মহৎ’/‘মহতী’ ও ব্যক্তির ক্ষেত্রে ‘মহান’ বসবে।
যেমন: মহাজ্ঞান = মহৎ যে জ্ঞান, মহাজন = মহান যে জন।
২. ‘কদ’ থাকলে: ‘কদ’ স্থানে ‘কু’ হবে।
যেমন: কদাচার = কু যে আচার, কদর্থ = কু যে অর্থ।
৩. ‘রাজ’ থাকলে: ‘রাজ’ স্থানে ‘রাজা’ বসবে।
যেমন: মহারাজ = মহান যে রাজা।
৪. অধম/বাটা/সিদ্ধ/ভাজা: এ শব্দগুলো পরে থাকলে আগে আনতে হবে।
যেমন: নরাধম = অধম যে নর, আলুসিদ্ধ = সিদ্ধ যে আলু।
৫. দুটো বিশেষ্য বা দুটো বিশেষণ একই ব্যক্তি/বস্তুকে বোঝালে: যিনি-তিনি, যে-সে, যা- তা বসবে।
যেমন: চালাক-চতুর = যে চালাক, সেই চতুর। এখানে ‘চালাক’ ও ‘চতুর’- দুটোই বিশেষণ (দোষ/গুণ)।
জজসাহেব = যিনি জজ, তিনিই সাহেব। এখানে ‘জজ’ ও ‘সাহেব’- দুটোই বিশেষ্য।
৬. একটি বিশেষ্য ও একটি বিশেষণ মিলে একজন ব্যক্তি/বস্তুকে বোঝালে: মাঝে ‘যে’ বসবে।
যেমন: নীলপদ্ম = নীল যে পদ্ম। এখানে ‘নীল’ বিশেষণ, ‘পদ্ম’ বিশেষ্য। দুটো পদ মিলে একটি বস্তুকে (নীল রঙের পদ্ম) বোঝাচ্ছে।

দ্রষ্টব্য: ওপরের চেনার উপায় ও উদাহরণসমূহ- সবই সাধারণ কর্মধারয় সমাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কর্মধারয় সমাসের অন্যান্য প্রকারভেদ পাওয়া যাবে এখানে