আমাদের সম্পর্কে

বাংলা ভাষার সহস্র বছরের ইতিহাসে এ ভাষাকে গড়ে তোলার, সমৃদ্ধ করে তোলার অনেক প্রচেষ্টার গল্প আমাদের জানা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ থেকে মুনীর চৌধুরী- বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে এগিয়ে নিয়ে যেতে, বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে ভূমিকা রেখেছেন আমাদের দিকপাল সব লেখক-গবেষকেরা।

কিন্তু এতকিছুর পরেও, বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে আমাদের এত এত ত্যাগ, এত এত সংগ্রামের পরেও আমরা কি আমাদের এ ভাষাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে পারছি? অন্তত নিজেদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকেও কি ভাষার ব্যবহারে আমরা যথেষ্ট সচেতন হতে পেরেছি? উত্তরটি নিঃসন্দেহে- ‘না’।বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে অনেক পণ্ডিত ব্যক্তিই মনে করেন, বাংলা ভাষা হয়তো একসময় ভারত থেকে হারিয়ে যাবে এবং শেষমেশ বাংলাদেশেই বেঁচে থাকবে। যদি সেটাই হয়, তাহলে এ ভাষার গন্তব্য কোথায়?যদি এ দায়িত্ব আমাদের ওপরেই বর্তায়, তাহলে সেটা নিশ্চিতে আমাদের তৎপরতা কোথায়? দৈনন্দিন ভাষার ব্যবহারে বাংলা-ইংরেজি-হিন্দির মিশ্রণে এক অদ্ভুত ধরনের ভাষাচর্চার ব্যাপার তো আছেই, বাংলায় কিছু লিখতে গেলে শত শত বানান ভুলের অভ্যাসও আমাদের নিতান্ত কম নয়।

এমন পরিস্থিতিতে ভাষার শুদ্ধ চর্চাকে এগিয়ে নেয়াটা অত্যন্ত জরুরি।আমাদের দেশে বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলা একাডেমি। যদিও যথেষ্ট নয়, তবু ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার ও বানানের শুদ্ধ চর্চার ব্যাপারে নানান সময়ে বাংলা একাডেমির নানবিধ প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু অত্যন্ত বিস্ময়ের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেকে তাদের কথাও মানতে নারাজ। সুতরাং একদিকে সাধারণ মানুষের ভাষা ব্যবহারে রয়েছে অসচেতনতা, অপরদিকে শুদ্ধ ভাষাচর্চা নিশ্চিতে একক হাতে বাংলা একাডেমির পক্ষে ইতিবাচক ফলাফল আনয়ন বেশ কঠিন।

এই যখন অবস্থা, এমনই এক সময়ে, ‘শুদ্ধ ভাষা চর্চার আন্দোলন’ শ্লোগান নিয়ে ২০১৫ সালে বাংলা ভাষায় শুদ্ধতার চর্চা নিশ্চিতে কাজ শুরু করে ‘বানান আন্দোলন’। শুরুটা হয় একটি ফেইসবুক গ্রুপ তৈরি করার মধ্য দিয়ে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশসহ পৃথিবীর ৪০টি দেশের বাংলাভাষী মানুষ ‘বানান আন্দোলন’-এর কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। সবার একটিই লক্ষ্য- বাংলা বানান ও ভাষার শুদ্ধ ব্যবহারের বিষয়গুলো ভালোভাবে ঝালিয়ে নেয়া। শুদ্ধ ভাষা চর্চার এ আন্দোলনটিকে সামনের দিনগুলোতে আরও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে কাজ চলছে প্রতিনিয়ত। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর বাংলাভাষী সকল মানুষ উপকৃত হবেন, বাংলা ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগে সচেতন ও পারদর্শী হয়ে উঠবেন- এটিই ‘বানান আন্দোলন’-এর মূল লক্ষ্য।